Thursday, May 26, 2016

ঈদ-উল-আজহার উৎসবে ধরে রাখুন আপনার ফিটনেস Stay Fit On This Eid-ul-Adha Occasion

উৎসবে খাবার খান পরিমিত পরিমানে
আর মাত্র কদিন পরই ঈদ-উল-আজহা| প্রথমেই সবাইকে ঈদ মুবারক ও ঈদের অনেক শুভেচ্ছা|
কোরবানী ঈদ মানেই খাওয়া আর খাওয়া| মাংসের হরেক রকমের পদের পাশাপাশি মিষ্টি খাবার, শীতের পিঠা, ইত্যাদি থাকে আমাদের প্লেটে| বেশি খাবার সামনে থাকলে খেতে ইচ্ছা করবেই, আবার নিমন্ত্রণে গেলেও খাবার দেখে লোভ সংবরণ করাই দায়, আর বেশি চাপাচাপি করলে তো আরো খেতে হয়|
এই ঈদে অনেক দিন ধরে চলে খাওয়া-দাওয়া, দাওয়াত, অনেক দিন ধরে মাংশ থাকে ফ্রিজে| তাই ঈদ এবং ঈদ-পরবর্তী সময়ে সুস্থ্য থাকা ও ফিটনেস ধরে রাখাটা অনেক কষ্টকর | কিন্তু যদি থাকে ইচ্ছাশক্তি আর একটু সচেতনতা, খাবার ও ব্যায়াম সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান, তবে ফিটনেস ধরে রাখা কোনো ব্যাপারই না| আর ফিটনেস বাংলাদেশে ব্লগের পাঠকরা তা পারবে বলেই আমার বিশ্বাস| তাই আপনাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন, পরিমিত আহার করুন| বেশি খেয়ে ওজন বাড়াবেন না বা অসুস্থ্য হবেন না|
কিছু ঈদ উত্সবের স্বাস্থ্য টিপস আগেই দিয়েছিলাম| যেহেতু আগের বছরের তুলনায় এখন অনেক অনেক পাঠক আমার ব্লগে, তাই আপনাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আপনাদের  জন্য  নতুন ভাবে  ঈদ-উল-আজহার স্বাস্থ্য টিপস দিচ্ছি|

ঈদ-উল-আজহার উৎসবে সুস্থ্য থাকার বা ফিটনেস ধরে রাখার কিছু টিপস —
কি ভাবে খাবেন?
  • খাবার দেখেই ঝাপিয়ে না পড়ে, আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করুন, নিজেকে সংযত করুন, পরিমিত আহার করুন|খাবারকে নয়, সবার সাথে সাক্ষাত করে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করুন, কোরবানীর ত্যাগের আনন্দ উপভোগ করুন|
  • বেশি ক্ষুধা লাগিয়ে না খেয়ে অল্প ক্ষুধা লাগলে খান, এতে কম খাওয়া হবে, খাবার আগে পানি খেয়ে নিন, অথবা দাওয়াতে যাওয়ার আগে সালাদ, ফল ইত্যাদি কম ক্যালরির সহজ পাচ্য খাবার বা পানীয় খেয়ে নিন, তাহলেও কম খাওয়া হবে |
  • কোরবানী ঈদে যেহেতু লাল মাংশ(গরু,খাসি)ছড়াছড়ি, তাই মাংশ খেতেই হয়, কিন্তু যখন খাবেন, তখন একবারে অল্প পরিমানে খান| কেননা, লাল মাংসে অনেক ফ্যাট থাকে|
  •  লাল মাংস যে আমাদের শরীরের জন্য কি ভয়ংকর তা মনে রাখুন। লাল মাংস, যেমন:  গরু, খাসির মাংশে যে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি থাকে, তা স্থূলতা বাড়ানোর পাশাপাশি, রক্তনালিতে চর্বি জমায়, রক্তচাপ বাড়ায়, ডায়াবেটিস বাড়ায়, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের দিকে আপনাকে নিয়ে যায়, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারও হতে পারে এই লাল মাংসের কারণে।মাংশ বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, ডায়রিয়া, গ্যাস্টিকের/আলসারে সমস্যা ইত্যাদিও হতে পারে|
  • কিন্তু তাই বলে কি এই ঈদে লাল মাংশ খাবেন না? খাবেন,তবে মাংশ খাবেন খুবই পরিমিত পরিমানে|
  •  যাঁরা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, কিডনির সমস্যা, Arthritis (গেটেবাত ), হৃদরোগ ইত্যাদিতে ভুগছেন, তাঁরা অবশ্যই ডাক্তারের বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মত ও পরিমিত পরিমানে  খাবেন।
  • মাংশ যখন খাবেন তখন একবারে কতটুকু খাবেন? আপনার হাতের তালুর সমান মাংশ একবারে খেতে পারবেন|
  • ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের বলেন: “আমাদের  দৈনিক খাদ্যতালিকায় চর্বিজাতীয় খাদ্য থাকবে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। এবং তার মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকবে মাত্র ৭ শতাংশ।”
  • আর ভাত জাতীয় খাবার একবারে খাবেন এক থেকে আধা কাপ|
  • প্রতি বেলা মাংশ না খেয়ে একবেলা হলেও মাছ খান| যেমন: রাতের খাবারে মাছ রাখতে পারেন| কারণ মাছে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ভালো|
  • কোনো দিন বেশি মাংশ খাওয়া হয়ে গেলে, তারপর দিন সবজি, সালাদ, ফল, ডাল খেয়ে ব্যালান্স করুন|
  • মাংশ মানেই আমিষ| এই আমিষের চাহিদা পুরণে, প্রতিদিন বা প্রতিবেলা লাল মাংশ না খেয়ে ডাল, মাছ, কম ফ্যাটের মুরগির মাংশ ইত্যাদি খেতে পারেন|
  • মাংশ, পোলাও,বিরিয়ানি ইত্যাদি গুরুপাক খাবার যখন খাবেন, তখন খাবারের সাথে প্রচুর সালাদ খাবেন| কারণ সালাদ খাবার হজমে সাহায্য করে|
  • এছাড়া প্রতি বেলার খাবারে অবশ্যই বেশি বেশি সবজি খাবেন|
  • আঁশ বা ফাইবার রাখবেন প্রতি বেলার খাবারের তালিকায়|কারণ এই আঁশ খাবার হজমে ও হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, চর্বিও জমতে বাঁধা দেয়|এই আঁশ আমরা পেতে পারি রান্না বা কাঁচা শাক-সবজি,ফল মূল, সালাদ, লাল আটা,বাদাম ইত্যাদি থেকে|
  • ওজন কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে কম ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতে চেষ্টা করুন সবসময়| তাই মাথায় রাখুন বিরিয়ানি, পোলাউ, ভাত, তেলেভাজা, মিষ্টি খাবার, কোমল পানীয়তে প্রচুর ক্যালরি|
  • এই ঈদে যেহেতু অনেক রকম খাবারের সমরোহ থাকে সবার বাড়িতে, তাই অন্যান্য বেশি ক্যালোরির খাবার যেমন: ফাস্ট ফুড, কেক, সিঙ্গারা,পেয়াজু, বেশি তেলে ভাজা খাবার, চিপস ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন|
  • প্রতিদিন নিয়ম করে ফল, সবজি, সালাদ, আর প্রচুর পানি খেতে ভুলবেন না|
  • টক দই, বোরহানি, লেবুর শরবত (চিনি ছাড়া) ইত্যাদি খাবার হজমে সহায়ক| এগুলো খাবার পরে খেতে পারেন|
  • সকালে উঠেই লেবু আর মধু এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে গুলে খেলে তা হজমের জন্য এবং মেদ কমাতে সহায়ক| বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন|
  • কাবাব,গ্রিল, সেদ্ধ করা মাংশ খান|  ভাজা বা ভুনা, মশলাদার মাংশ বেশি খেলে স্বাস্থ্য ও পেটের সমস্যায় পড়তে হবে|এগুলোতে ক্যালরি বেশি থাকায় ওজনও বাড়তে পারে|
  • মাংশের যে জায়গায় চর্বি কম, সেখানকার মাংশ খেতে পারেন, যেমন: রানের মাংশ|
  • মাংসের চর্বি পরিহার করুন, চর্বি/ কোলেস্টেরল যুক্ত অঙ্গ, যেমন: মগজ, কলিজা ইত্যাদি যথাসম্ভব কম খান, বা বাদ দিন|
  • কোনো বেলা বেশি খেয়ে ফেললে বা দাওয়াত থাকলে অন্য বেলা রুটি,সালাদ, বা স্যুপ খেয়ে ব্যালান্স করুন |
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে শর্করা( ভাত, চিনি ) জাতীয় খাবার কম খেতে হবে |
  • আর মিষ্টি খাবার/চিনি যুক্ত খাবার দুই, একদিনের বেশি না খাওয়াই ভালো | খেলেও খুবই অল্প পরিমানে| সেক্ষেত্রে সেবেলা শর্করা জাতীয় অন্যান্য খাবার কম খাবেন অথবা খাবেন না|
  • কোমল পানীয়, চিনি যুক্ত পানীয় না খাওয়াই ভালো | বদলে, ফলের চিনি ছাড়া জুস,  বোরহানি, টক দই, পুদিনা লাচ্ছি, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে পারেন|
  • মিষ্টি খাবার, গুরুপাক খাবার যেদিন খাবেন, সেদিন প্রচুর পানি খাবেন |
  • গুরুপাক খাবারের সাথে বা মাংসের সাথে লেবুর রস খেলে তা হজমে সাহায্য করে |
  • প্রতিদিন portion control করতেই হবে, অন্তত পাঁচ থেকে আট বেলা পরিমিত আহার করুন, এটা ওজন কমানো এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক|
  • সকালের নাস্তা, দুপুরের ও রাতের খাবারে শর্করা, সবজি, আমিষ রাখতে চেষ্টা করুন| প্রতিদিনের খাবারে সব খাবারের উপাদান যেমন: শর্করা,আমিষ, ভিটামিন, ফ্যাট,দুধ,মিনারেলস ইত্যাদি যেন থাকে তা নজর দিন| Balanced খাবার/diet মেনে চলুন|
  • বেশি বেশি সচেতন হয়ে আবার মজাদার খাবার না খেয়ে নিজেকে সব খাবার থেকে বঞ্চিত করেবেন না| মনে রাখবেন দৈনিক ৫০০ ক্যালরি বেশি খেলে, আপনার ওজন বাড়বে এক সপ্তাহে এক কেজি বা দুই পাউন্ড|বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন|  
  • আপনার প্রতিদিনের শারীরিক ক্যালোরির চাহিদা অনুযায়ী ক্যালরি মেপে খাবার খান|
  • যারা ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তারা সেভাবেই বুঝে শুনে খাবার খাবেন| উৎসবের আনন্দে ভেসে, মজার খাবারের জোয়ারে ডুবে, আপনার ডায়েট নষ্ট করবেন না| এতে আপনার সব কষ্ট মাটি হয়ে যাবে|অল্প খাবার খেয়েই খাবারের মজা নিন|
কি ভাবে মাংশ রাঁধলে স্বাস্থ্যসম্মত হবে?
  • মাংশ ভাজতে হলে, হালকা বা খুব কম তেলে ভাজুন
  • উৎসবের রান্নার সময় তেল, ঘি, মাখন, ক্রিম, ডালডা ইত্যাদি কম ব্যবহার করুন| মাংশেই যে পরিমান সম্পৃক্ত চর্বি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, তা শরীরের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর|
  • মাংশ রান্নার সময় লবন দিয়ে সেদ্ধ করে, পানি ফেলে দিলে কিছুটা হলেও চর্বি পানির সাথে চলে গিয়ে দূর হবে|
  • কাবাব, গ্রিল, সেদ্ধ করে মাংশ রাঁধলে কিছুটা হলেও ক্যালরি বা ফ্যাট কমবে|
  • কম মশলায় ও তেলে মাংশ রাধলে হজমে সহায়ক হবে|
ব্যায়াম করা ছাড়বেন না

  • ব্যায়ামের অভ্যাস থাকলে সেটা অব্যাহত রাখুন| কোনো ভাবেই ব্যায়াম বন্ধ করা যাবে না| উৎসবের ব্যায়াম কিভাবে করবেন? জানতে ক্লিক করুন
  • জিম বন্ধ? দেশের বাড়িতে ঈদ করবেন? তারপরেও ব্যায়াম করা যায়| ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়|যেমন: ফাঁকা জায়গায় হাঁটুন, দৌড়ান, সিঁড়ি দিয়ে উঠুন ও নামুন, আর একটু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন| পুশ আপ দিন, কিছু পেটের ব্যায়াম করুন|ব্যাস আর কি লাগে?
  • বাসায় কিছু ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি থাকলেতো কথাই নেই|যেমন: ট্রেড মিলে হাঁটুন, ওয়েট/ডাম্বেল নিয়ে একটু ব্যায়াম করে নিন|
  • সব সময় অলস সময় না কাটিয়ে একটু ঘরের কাজ করুন, শরীরটাকে কর্মচঞ্চল রাখুন|দেখবেন কেমন ঝরঝরে লাগছে|
  • বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় সজন নিয়ে হাঁটতে বের হোন, পারলে দৌড়ান, সাইকেল চালান|
  • হাটাহাটি এবং ব্যায়াম করবেন সেদিন বেশি বেশি, যেদিন বেশি খাওয়া হবে| ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার বাড়তি ক্যালরি যা খেয়েছেন, তা বার্ন হয়ে দৈনিক ক্যালোরির চাহিদার সমতা আনবে|ফলে আপনার শরীরে বাড়তি ক্যালরি জমে, ওজন বাড়বে না|
এছাড়া আরো অনেক উৎসবের খাওয়ার টিপস পেতে অবশ্যই ক্লিক করুন|
আরো অনেক ঈদ-উল-আজহার স্বাস্থ্য টিপস পাবেন এই লিঙ্কে |
উৎসবে একটু হলেও আপনার স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন | খাওয়া দাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি ব্যায়ামটাও চালিয়ে যান আগের মতই| নিজেকে বোঝান, যে আপনি কিছুতেই ওজন বাড়াতে দেবেন না এবং সুস্বাস্থ্য বজায়  রাখবেন| চিন্তা   করুন , বেশি খেয়ে   ওজন বাড়াবেন, ডায়বেটিস, রক্তচাপ, গেটেবাতের সমস্যা বাড়াবেন, পেটের সমস্যা করবেন , নাকি  সুস্থ্য থাকবেন ও  ওজন নিয়ন্ত্রণে  রাখবেন?
আপনার বন্ধু, আত্মীয়, স্বজন, এবং প্রিয়জনকে এই টিপস গুলো দিয়ে উপকার করুন |

No comments:
Write comments