খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি ছাড়াও পেঁয়াজে রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা !
প্রতিদিনের রান্নায় যে জিনিসটি আপনার প্রয়োজন তা হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজ ছাড়া বাঙালির রান্নাঘর বন্ধ। খাবারের স্বাদ আর পুষ্টি বাড়াতে পেঁয়াজের জুড়ি নেই। শুধু কি তাই, এই পেঁয়াজের কারণেই বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ আপনার কাছে ঘেষতে সাহস পাচ্ছে না। আপনার অগোচরেই আপনার এতসব উপকার করে যাচ্ছে এই পেঁয়াজ।
খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি ছাড়াও পেঁয়াজে রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। একটি বড় পেঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ও ০.৭ শতাংশ লোহা থাকে। এছাড়া পেঁয়াজে ভিটামিন এ, বি ও সি আছে।
চলুন তবে জেনে নেই-
১. পেঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টি-বায়োটিক, অ্যান্টি-সেপ্টিক, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং বায়ুরোগহর। যা রোগ সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।
২. পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, তন্তু, পটাসিয়াম, ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-সি। এতে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম এর পরিমান কম।
৩. জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, গলা ব্যথা, এলার্জি ইত্যাদি খুব দ্রুত পেঁয়াজের দ্বারা দূর করা সম্ভব। পেঁয়াজের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিকভাবেই রোগ নিরাময় হয়।
৪. এক টুকরা পেঁয়াজ অর্ধেক করে কপালে দিয়ে রাখলে জ্বরের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দূর হয়।
৫. নাক দিয়ে রক্ত পড়লে, এক টুকরা পেঁয়াজ নাকের সামনে নিয়ে নিঃশ্বাস নিলে, রক্তপাত মন্দীভূত অর্থাৎ থেমে যাবে।
৬. যাদের ঘুমে সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন পেঁয়াজ খাবার অভ্যস করলে, তাদের ঘুমের সমস্যা অবশ্যই দূর হবে।
৭. পেঁয়াজ পাচনতন্ত্র উন্নত করতে পারেন। যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে, পেঁয়াজ খাবার ফলে হজম রস বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি নিরাময় হয়।
৮. পেঁয়াজের রস পোড়া স্থানে, পোকা-মাকড়ের কামড় দেয়া স্থানে এবং মৌমাছির কামড় দেয়া স্থানে লাগালে তাড়াতাড়ি তা হতে পরিত্রাণ পাওা যায়। যদিও ক্ষত স্থানে পেঁয়াজ লাগানোর ফলে জ্বালাতন আরও বৃদ্ধি পায়।
৯. ক্যান্সার রোধ করতেও পেঁয়াজ সাহায্য করে। এটি মাথা, ঘাড় ও কোলন ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে।
১০. পেঁয়াজ শরীরের ইনসুলিন বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিক রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তে চিনির স্তর ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
১১. শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে এবং ভাল কোলেস্টেরলকে সুরক্ষিত রাখে।
১২. বাতের প্রদাহ দূর করতে পেঁয়াজ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।
১৩. শরীরের যেকোনো ব্যথা দূর করতে পেঁয়াজ ব্যাবহার করা যায়। এর জন্য তিলের তেল অথবা রেড়ীর তেলের সাথে পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে। তারপর ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে রাখুন।
১৪. ত্বকের কাল দাগ দূর করার জন্য পেঁয়াজ ও হলুদের রস একসাথে মিশিয়ে লাগিয়ে রাখুন।
১৫. কান ও চোখের সমস্যা দূর করার জন্য পেঁয়াজের রস ব্যাবহার করা হয়। শিশুদের চোখের দৃষ্টি স্পষ্ট করার জন্য পেঁয়াজের রস ব্যাবহার করা হয়।
১৬. দাঁতের ক্ষয়িষ্ণু দূর করার জন্য ব্যাবহার করা হয়।
১৭. পেঁয়াজ শরীরের টিস্যুগুলোকে নবজীবন প্রদান করে।
১৮. ভাল মেমোরি ও শক্তিশালী স্নায়ুতন্ত্রের জন্য পেঁয়াজকে আপনার সব থেকে প্রিয় খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করুন।
১৯. চুল পড়া রোধ করার জন্য মাথায় পেঁয়াজের রস ব্যাবহার করুন। এটি পেঁয়াজের সব থেকে বড় সুবিধা।
২০. পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। গ্যাসের সমস্যা দূর করার জন্য এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আপনার পছন্দ হোক বা না হোক প্রতিদিন ১০০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত পেঁয়াজ খাওয়া উচিত। এতে আপনার শরীরের অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
পেঁয়াজ দিয়ে যেভাবে সুন্দরী হবেন
খাবারের গন্ধ ও স্বাদ বাড়ানো ছাড়াও অনেক কাজের কাজি পেঁয়াজ। শুধু চেহারা নয়, চুলের সৌন্দর্যও বাড়াতে ব্যবহার করা হয় এই মসলা। উজ্জ্বল চুল পেতে চাইলে নামিদামি ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুর ওপর নির্ভর না করে বরং রান্নাঘরে ঢুঁ মেরে একটা পেঁয়াজ আনুন। সমপরিমাণ নারিকেল বা জলপাইয়ের তেলের সঙ্গে পেঁয়াজ বাটা মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে একটি টাওয়েল দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে রাখুন। ঘণ্টা দুয়েক পর চুল আঁচড়ে পছন্দের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।প্রাকৃতিকভাবেই এসিডিক পেঁয়াজ মাথার তালুর কোষগুলোকে উজ্জীবিত করায় চুল হয়ে ওঠে ঝলমলে। বহু শতাব্দী আগে থেকেই চুল লম্বা করতে পেঁয়াজের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ব্যবহারকরা হয়। এটি নিয়মিত লাগালে লম্বার পাশাপাশি ঘনও হয় চুল।এ তো গেল একটা দিক। অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন পেঁয়াজ। পোকার কামড় বা হুল ফোটানো স্থানে এক টুকরো পেঁয়াজ ঘষতে থাকুন। খানিক পর দেখবেন, জ্বলুনি কমে আসবে। পেঁয়াজে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান আছে, যা অ্যালার্জি প্রতিরোধী ও ব্যথানাশক। ব্রিটেনের অ্যালিস রবিনসন পেঁয়াজের এমনই কিছু চমকপ্রদ ব্যবহার শিখিয়েছেন।পেঁয়াজের ছোঁয়ায় সুন্দরী!
এ ছাড়া ত্বকের কালো দাগ দূর করতেও কার্যকর পেঁয়াজ। বাটা পেঁয়াজের প্রলেপ ত্বকের শুষ্ক কোষকে প্রাণবন্ত করে এবং মরা কোষগুলো তুলে ফেলে। ল্যাকটিক এসিড এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে বলে দইয়ের সঙ্গে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। এটি ব্রণ, মেসতা এসবের হাত থেকেও ত্বককে বাঁচায়। কেবল মুখের ত্বকই নয়, কনুইয়ের কালচে ছোপ দূর করতেও কাজে লাগাতে পারেন পেঁয়াজের রস। এক মগ গরম পানিতে কয়েক টুকরো পেঁয়াজ ছেড়ে দিন। তার পর কনুই ভাঁজ করে তাতে ডুবিয়ে রাখুন। এভাবে কয়েক মিনিট রাখুন। প্রতিদিন নিয়মিত এটি করলে ধীরে ধীরে কালচে দাগ কমে আসবে।
পেঁয়াজের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ব্যথারোধী গুণের কথা উল্লেখ করে ব্রিটেনের এসেক্সে অবস্থিত উডফোর্ড মেডিকেল ক্লিনিকের চিকিৎসক মারভিন প্যাটারসন বলেন, ব্যবহারের আগে খেয়াল রাখতে হবে আপনার চামড়া এটিকে সহ্য করতে পারে কি-না। তা ছাড়া পেঁয়াজের উৎকট গন্ধও অনেকে সহ্য করতে পারেন না।
Comments
Post a Comment