এ যেন শিব ঠাকুরের আপন দেশ! এখানে মোবাইল হাতে কোনও
কিশোরী বা অবিবাহিতা মহিলাকে দেখলেই পেয়াদা ধরবে। এবং
একুশশো টাকা
দণ্ড দিতে হবে। আর যিনি এই খবরটি পেয়াদাকে দেবেন,
তাঁর
জন্যও থাকবে বকশিসের
ব্যবস্থা। ২০০ টাকায় নগদ বিদায়। ভারতের গুজরাটের মেহসানা-র সূর্য নামের এক
গ্রামে সম্প্রতি এমনই নিয়ম পাশ হয়েছে। সৌজন্যে
গ্রামসভা।
অথচ চলতি মাসের প্রথম দিকে ওই সভা বসেছিল সম্পূর্ণ
ভিন্ন এক কারণে। পুরুষরা মদ খেয়ে এসে তাঁদের পরিবারের
অন্য সদস্যদের
উপর অত্যাচার করেন। দিন দিন তার সংখ্যা বাড়ছিল। আর গ্রামসভায় প্রতি দিন এ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়ছিল
ভুরিভুরি। সেই সমস্যারই সমাধানে বসে গ্রামসভা। কিন্তু, আলোচনা শুরু হওয়ার পরে তা মোড় নেয় অন্য পথে। পুরুষের অত্যাচার নিয়ে আলোচনা ঘুরে যায় মহিলাদের মোবাইল ব্যবহারের দিকে। তার পরে সেই ‘সমস্যা’ নিয়েই পর্যালোচনা হয়। তার পরেই
গ্রামের প্রধান সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।
কী সেই সিদ্ধান্ত?
পুরুষের মদ্যপানের মতো মহিলাদের মোবাইল ব্যবহারও খুব
খারাপ একটি কাজ। এতে সমাজের ক্ষতি হয়। কিশোরীদের পড়াশোনার পাশাপাশি মহিলাদের ঘরের কাজে মনোসংযোগও
সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয় মোবাইল। তাই ‘নষ্টামি’
রুখতে
গ্রামের অবিবাহিত সকল মহিলাদের ক্ষেত্রেই মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
জারি করা হয়েছে। গ্রাম প্রধান দেবশি ভানকর বলেন,
‘‘মোড়লদের
মত মেনেই
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ স্কুলছাত্রদেরও
জন্য খুব শীঘ্রই এমন একটা নিয়ম আনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে ওই
নিয়ম। যদিও অবিবাহিত মহিলারা তাঁদের বাবা-মা-সহ পরিবারের অন্য
সদস্যদের
মোবাইল ব্যবহার করে কেবলমাত্র কথা বলতে পারবে। অন্য
কোনও কাজে তা কোনও
ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। যদি কোনও
অবিবাহিতাকে মোবাইল সমেত দেখা যায়, তবে তাঁকে রীতিমতো গ্যাটের কড়ি খরচা করে জরিমানা দিতে হবে। সেটার পরিমাণও ঠিক করে দিয়েছে গ্রামসভা— ২১০০ টাকা। আর যিনি এই খবরটা পৌঁছে দেবেন মোড়লদের কাছে, তাঁকে দেওয়া
হবে ২০০ টাকা বকশিস।
পুরুষদের অত্যাচার নিয়ে সভা ডেকে কী ভাবে মহিলাদের
ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রশ্নে হস্তক্ষেপ করা হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই
দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। বিতর্ক অন্য
মাত্রাও পেয়েছে। কারণ,
প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদীর এই মুহূর্তে ঘোষিত নীতি ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’। গ্রামে
গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিতে তত্পর হওয়ার কথাও বিভিন্ন সময়ে
বলেন তিনি। আর এ রকম একটা সময়ে তাঁর আপন রাজ্য
গুজরাতের একটি গ্রামে এমন নিয়ম তৈরি হওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঘটনাচক্রে যে মেহসানায় এমনটা হয়েছে, তারই এক মফস্সল
শহর ভাডনগরেই জন্মেছিলেন মোদী।
No comments:
Write comments