কি রয়েছে পান্তা ভাতে? পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ

বৈশাখ মানেই পান্তা ইলিশ! পান্তা যদিও আমাদের দেশের গ্রামের মানুষের প্রতিদিনের খবার। কিন্তু শহরে এই খবার হয়ে থাকে বিলাস। আজ আপনাদের পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানাবেন হেলথ বার্তার নিয়মিত লেখক মোঃ নাহিদ নেওয়াজ জোয়ার্দার। চলুন তবে এই বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
পান্তা ভাত  গ্রামীণ বাঙালি জনগোষ্টির একটি জনপ্রিয় খাবার। পান্তা ভাত গ্রামীণ মানুষ সকালের নাশতা হিসাবে খেয়ে থাকে। সাধারণত লবণ, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ মিশিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া হয়। আর সারা বছর শহুরে বাসিন্দাদের নিকট পান্তা ভাত অবহেলার পাত্র হয়ে থাকলেও, পহেলা বৈশাখের সকালে ঠিকই পান্তা ভাতকে তারা হাজির করেন তাদের খাবার টেবিলে। মূলত পান্তা ভাত, ভাত সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। নৈশভোজের জন্য রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে সংরক্ষণের জন্য এই ভাতকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে প্রায় এক রাত ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়।
ভাত মূলত পুরোটাই শর্করা। ভাতে পানি দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া  বা ইস্ট এই  শর্করা ভেঙ্গে  ইথানল ও ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে। ল্যাকটিক এসিড  তৈরির ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায় (pH কমে) তখন পচনকারি ও অনান্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও  ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।
সম্প্রতি Assam Agricultural University এর একদল গবেষক  একটি  বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখেছেন যে  ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে (১২ ঘণ্টা পর ভিজিয়ে রাখার পর) ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম। এছাড়াও ১০০ গ্রাম পান্তাভাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৩৯ মিলিগ্রাম  এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৫০ মিলিগ্রাম যেখানে সমপরিমাণ  গরম ভাতে ক্যালসিয়াম থাকে মাত্র ২১ মিলিগ্রাম। এছাড়া পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে হয় ৩০৩  মিলিগ্রাম যেখানে সমপরিমাণ  গরম ভাতে সোডিয়াম থাকে ৪৭৫ মিলিগ্রাম।
তাছাড়া পান্তা ভাতে ফারমেন্টেশনের ফলে পাকস্থলীতে উপ্সহিত প্যানক্রিয়াটিক অ্যামাইলেজ সহ আরও কিছু এনজাইমের কার্যকারিতা বহুগুণ বেড়ে যায় এতে করে পান্তা ভাতে উপ্সহিত অলিগোসাকারাইডসহ আরও কিছু জটিল শর্করা খুবসহজেই হজম হয়ে যায়।
এছাড়া পান্তা ভাত ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন বি-১২ এর ভাল উৎস।পান্তাভাত শর্করাসমৃদ্ধ জলীয় খাবার। গরমের দিনে শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। জলীয় খাবার বলে শরীরের পানির অভাব মেটায় এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে।পান্তা ভাত খেলে শরীর হালকা এবং কাজে বেশি শক্তি পাওয়া যায়, কারণ এটি ফারমেন্টেড খাবার। মানব দেহের জন্য উপকারি বহু ব্যাকটেরিয়া পান্তা ভাতের মধ্যে বেড়ে উঠে।
পেটের পীড়া ভাল হয়, কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং শরীরে সজিবতা বিরাজ করে। এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে।পেটের পীড়া ভাল হয়, কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং শরীরে সজিবতা বিরাজ করে। এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে।রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে, কারণ পান্তা ভাতে গরম ভাতের তুলনায় সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। আশা করছি এই বৈশাখে পান্তাভাত দিয়ে শুরু হওয়া সকালটা বেশ ভালই কাটবে আপনাদের। সবাইকে বৈশাখের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইল।
লেখা:
মোঃ নাহিদ নেওয়াজ জোয়ার্দার;
বি.এস সি (অনার্স) শেষ বর্ষ,
পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর।

Comments

Popular posts from this blog

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের অনলাইনে আবেদনের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

National University Honours admission Result 2015-2016

Buet Engineering Admission Test Question with Solve