বেকায়দায় বাংলাদেশ ব্যাংক


প্রতি বছর চিকিৎসা, পর্যটন ও ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান বহু মানুষ। তাদের অনেকের হাতেই রয়েছে ভারতের রুপি। এর বাইরে বাংলাদেশের মানিচেঞ্জিং প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতেও রয়েছে ভারতীয় রুপি। ভারত সরকার হঠাৎ ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করায় এসব গ্রাহক পড়েছেন বিপাকে। গ্রাহকের পাশাপাশি বেশি বেকায়দায় পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আরো দু’টি ব্যাংক সোনালী ও রূপালী। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টেই রয়েছে ৫০ কোটি রুপি। এ ৫০ কোটি রুপি টাকা বা ডলারে রূপান্তর করে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (আরবিআই) ডিও লেটার পাঠিয়েছে। একই সাথে সোনালী ব্যাংকের কলকাতা শাখাকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে এখনো কোনো সাড়া মিলছে না ভারতের পক্ষ থেকে। এখন এটি ক্ষতির খাতায় চলে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা করছেন তারা।
গত ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর থেকে বাংলাদেশী পর্যটকরা বিপাকে পড়েন। ওই সময় মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জামান বলেছিলেন, সাধারণ গ্রাহকের সাথে তারাও পড়েছেন বিপাকে।
তিনি জানান, গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ চিকিৎসা, পর্যটন ও ব্যবসার কাজে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান। অনেকেই ফিরে এসে পাসপোর্টের ফটোকপি দিয়ে বৈধভাবে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে রুপির বিনিময়ে টাকা নেন। এভাবে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভারতের রুপি আছে। এর বাইরে অনেক মানুষের কাছেও ভারতের রুপি আছে। কিন্তু হঠাৎ করে ভারত সরকার ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করায় তারা এখন বিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করেছেন।
অপর একজন মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জানান, মানিচেঞ্জারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে তাদের অনেকেই ভারতীয় রুপি বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকেরাও বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। কিন্তু তাদের অনেকের কাছেই ভারতের রুপির নোট ছিল। অনেকেই মাসে দুইবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। তাদের হাতে থাকা ভারতের রুপি আর টাকায় রূপান্তর করতে পারেননি।
এ দিকে সীমান্তহাটগুলোতে যে লেনদেন হয় তার বেশির ভাগই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয়। এর বাইরে রূপালী ব্যাংকসহ অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেও লেনদেন হয়।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের কাছে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রুপি। এর বাইরে রূপালীসহ আরো কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রয়েছে ভারতীয় রুপি। কিন্তু নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে এসব ব্যাংক আর টাকায় রূপান্তর করতে পারছে না। বিষয়টি সুরাহা করতে সোনালী ব্যাংক কলকাতা শাখা থেকে যোগাযোগ করা হলেও এখনো এ বিষয়ে আশাব্যঞ্জক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে সোনালী ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
এ দিকে তফসিলি ব্যাংকের মতো স্বয়ং কেন্দ্রীয় ব্যাংকও পড়েছে মহাবিপাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে ৫০ কোটি ভারতীয় রুপি। এসব ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট। এসব নোট ভারত সরকার বাতিল করায় বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো এসব রুপি টাকায় রূপান্তর করতে পারেনি।
ভারতীয় এসব বাতিল নোট ডলার বা টাকায় রূপান্তর করতে ইতোমধ্যে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) বরাবরে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছিল। একই সাথে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে সোনালী ব্যাংক কলকাতা শাখাকেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে এ বিষয়ে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে আরো কিছুদিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে আবারো আরবিআইকে তাগিদ দেয়া হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের অনলাইনে আবেদনের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

National University Honours admission Result 2015-2016

Buet Engineering Admission Test Question with Solve